মোঃ শহিদুল ইসলাম
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, বিরাজিত ধর্মীয় রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ দেশের ধর্মীয়- জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জুম্ম জনগণ আজ সীমাহীন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। পাহাড়-সমতলে তাদের ভূমির অধিকার এতকাল পরেও নিশ্চিত হয়নি।
৯৭’র পার্বত্য শান্তিচুক্তি, ২০০১ এর পার্বত্য ভূমি বিরোধী নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আইন ও অর্পিত সম্পত্তির প্রত্যর্পণ আইনের আজও বাস্তবায়ন ঘটেনি। মুক্তিযুদ্ধের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে রাষ্ট্র-রাজনীতির সীমাহীন বিচ্যুতির কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নীতি ও আর্দশের প্রতি অবিচল থেকে লক্ষ্য ও কর্মসূচী যথাযথভাবে নির্ধারণ করে স্ব-বিরোধিতার ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে এগুনো ছাড়া সংকট থেকে মুক্তির আর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই।
০১ এপ্রিল ,শুক্রবার সকালে ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনাতনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
ডাঃ অধর লাল চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে ও এড. প্রদীপ কুমার চৌধুরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্মল রোজারিও, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু, প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, প্রফেসর রনজিত কুমার দে, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, মঞ্জু ধর, এড. তাপস পাল, শ্যামল পালিত, সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য, তাপস হোড়, এড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ, সত্যজিৎ দাশ রুপু, মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্তা, উত্তম কুমার শর্মা লায়ন শেখর দত্ত, হরিপদ চৌধুরী বাবুল, জিতেন কান্তি গুহ, সাগর মিত্র, এড. কানুরাম শর্মা, মাস্টার শ্যামল দে, সুগ্রীব মজুমদার দোলন, বিষ্ণুযশা চক্রবর্ত্তী, রাজীব দাশ, ডা: চন্দন দত্ত, বিধান রক্ষিত, অনুপ দাশ, রমা বৈদ্য, রূপসী দাশ, শম্ভুনাথ সরকার, অজিত বিশ্বাস, আশুতোষ চক্রবর্ত্তী, দিলীপ ঘোষ দীপু, আশীষ চৌধুরী, মাস্টার গোপাল বড়–য়া, রাখাল চন্দ্র নাথ প্রমুখ।
সকালে জাতীয় ও পরিষদের পতাকা উত্তোলন, কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধিত সম্মেলনে কাঞ্চন আচার্য্য, কমল বড়–য়া, মি. ডি রোজারিও, পবিত্র গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করে শুনান। সম্মেলনে দক্ষিণ জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও পৌর কাউন্সিলদের সংবর্ধনা জানানো হয়।
উদ্বোধনী ভাষণে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাশগুপ্ত বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারী দল সংখ্যালঘুদের স্বার্থে যেসব অঙ্গীকার করেছিল তার বাস্তবায়নে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, এ লক্ষ্যে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের সকল সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি দুঃখ করে বলেন, আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়। সংবিধানে পাকিস্তানও আছে, বাংলাদেশও আছে। ধর্ম নিরপেক্ষতাও আছে, ধর্মতত্ত¡ও আছে। রাষ্ট্র ধর্ম এদেশের ইসলামভিন্ন অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে, যার জন্য তারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এড. সুব্রত চৌধুরী সংখ্যালঘুদের উপর অব্যাহত হুমকি-হামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে আজও তারা মুক্তি পায়নি। বিগত বছর অক্টোবর মাসের শারদীয়াদুর্গাপূজার সময় সংঘটিত ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একদিকে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়েছিল, অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা এ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রীম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।এটিকে সরকারের দ্বি-চারিতা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন।
সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে লায়ন তাপস হোড়কে সভাপতি ও এড. প্রদীপ কুমার চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি গঠন করা হয়।