বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

চট্রগ্রাম লোহাগাড়া ইটভাটায় শিশু শ্রমিকসহ ৮জনকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

 

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ-

চট্টগ্রাম লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের কালুয়া পাড়া নামকস্থানে মা ব্রিক ফিল্ডে শিশুসহ ৮ জন শ্রমিককে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ওই ব্রিক ফিল্ডের মালিক পারভেজ ও ম্যানেজার খোকনের বিরুদ্ধে।

নির্যাতিতরা হলেন, নোয়াখালী সুবর্ণচর উপজেলার ৫নং চরজুবিলী ইউনিয়নের উত্তর চরমহিউদ্দিন আশ্রয়ণ প্রকল্পের আব্দুল মতিন (৪০) পিতাঃ- আব্দুর রব, নাছির উদ্দীন (৪২) পিতাঃ- শেকান্তর আলী, মোঃ ইউসুফ (২২) পিতাঃ- সাহাব উদ্দিন, রুপক (২২) পিতাঃ- গিয়াসউদ্দিন, পারভেজ (১০) পিতাঃ- ফারুক হোসেন, মোঃ ফকির ( ২৮) পিতাঃ- মৃত নুর নবী, মোঃ রায়হান ( ২৫) পিতাঃ- আবুল কালাম, মোঃ সুৃমন (২৫) পিতাঃ- নজির আহমেদ।

জানা যায়, নোয়াখালী কবিরহাট উপজেলার ধাঁনসিঁড়ি ইউনিয়নের জহির মাঝি চট্টগ্রাম লোহাগাড়া থানার চরম্বা ইউনিয়নের মা ব্রিক ফিল্ডে কাজের শ্রমিক দেয়ার চুক্তি করেন ওই ফিল্ডের মালিক পারভেজ এর সাথে, চুক্তি অনুযায়ী কাজের জন্য ফিল্ডে লোকও পাঠান তিনি, কয়েকমাস কাজ করার পর জহির মাঝি তাদের খোঁজ নিচ্ছে না, এবং তাদের কাজের মুজুরীও দিচ্ছে না, এমতাবস্থায় কিছু শ্রমিক ফিল্ড থেকে পালিয়ে যায়, ওই শ্রমিকগুলো পালানোর কারনে বাকি ৮ জন শ্রমিককে কোম্পানি পারভেজ নির্জন একটি ঘরে তালাবন্দি করে আটকে রেখে নির্যাতন করতে থাকেন।

খবর পেয়ে গত শুক্রবার (২৫ মার্চ) সাংবাদিকদের একটি অনুসন্ধানী টিম সেখানে পৌঁছেন, সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে ফিল্ডের ম্যানেজার পালিয়ে যান, সাংবাদিকরা সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, মা ব্রিক ফিল্ডের ভিতরে একটি ঘরের দরজায় তালা জুলছে, বাহিরে আটজনের জুতা দেখা যাচ্ছে, পাশে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, ভিতরে কারা আছে জানতে চাইলে দাঁড়িয়ে থাকা লোক তালা খুলে দেন, ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, আটজন শ্রমিক বসে আছে, এসময় সাংবাদিকদের দেখে তারা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।
তোমাদেরকে এখানে কে বন্দি রেখেছেন এবং কেন বন্দি রেখেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করেন।

এসময় দশ বছর বয়সী শিশু পারভেজ কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, গত ১৯ দিন ধরে এ রুমে আমাদেরকে কোম্পানী আটকে রেখেছেন, ঠিকমত খাবার দিচ্ছে না, একবেলা দেয় একবেলা দেয় না, ফিল্ডের ম্যানেজার (খোকন) ও কেরানী আমাদেরকে রড দিয়ে শারিরীক নির্যাতন চালান ও গালমন্দ করেন।

তারা জানান, আমরা এখানে খুব কষ্টে আছি, মাঝি না আসলে আমাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেন মালিক ও ম্যানেজার।
আমাদেরকে প্রস্রাব পায়খানা করার জন্য ও বের করে না, প্রস্রাব পায়খানা ধরলে পলিথিনের ভিতর প্রস্রাব পায়খানা করে জানালা দিয়ে বাহিরে পেলে দিই, এসময় জানালার পাশে পলিথিনের ভিতর প্রস্রাব, পায়খানা দেখতে পেয়ে ভিডিও ধারণ করেন সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী টিম।

ফিল্ডের কেরানী মাকছুদ নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন,সব শ্রমিক যখন ছিলো, কাজ করছে, তখন নির্যাতন করা হয়নি, কিছু শ্রমিক চলে যাওয়ার কারনে এদেরকে বন্দি করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় মা ব্রিক ফিল্ডের শেয়ার হোল্ডার আবদুল মাবুদের সাথে, শ্রমিকদের আটকের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, আমরা তাদেরকে আটক করেছি এজন্য যে, তাদের মাঝি আমাদের কাছ থেকে ত্রিশ লক্ষ টাকা নিয়ে এদেরকে আমাদের কাছে এই সিজনের জন্য বিক্রি করে দিয়েছে, আমাদের টাকা নিয়ে এদের মধ্য থেকে কিছু শ্রমিক পালিয়ে গেছে, এজন্য এদেরকে আটকে রেখেছি। টাকাতো এদেরকে দেননি, দিয়েছেন মাঝিকে, তাহলে মাঝির বিরুদ্ধে মামলা না করে এদেরকে বন্দি করে রাখছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মাবুদ বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা, আমরা পাঁচজন মিলে এ মা ব্রিক ফিল্ড দিয়েছি, পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন পারভেজ, তিনি বলতে পারবেন।

সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী টিম স্থানীয় আমিরাবাদ বাজারে গিয়ে শ্রমিক নির্যাতনের বিষয়ে পরিচালক পারভেজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার টাকা নিয়ে শ্রমিকরা কাজ করতে এসে কিছু শ্রমিক পালিয়ে চলে গেছে, এরা যে পালাবে না বিশ্বাস কি, একজন্য এদেরকে আটকে রেখেছি, আর একদিন অপেক্ষা করবো, যদি মাঝি ধরা না দেয়, তাহলে এদেরকে থানা পুলিশে সোপর্দ করবো।
এসময় মা ব্রিক ফিল্ডের মালিক রফিক, কালাম ও আব্দুল মাবুদ উপস্থিত ছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
ব্রেকিং নিউজ