ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা থামছেই না। প্রথম ধাপের নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে দেশবাসী আশা করেছিল, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু বাস্তবে লক্ষ করা যাচ্ছে, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটছে। বৃহস্পতিবার নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চলে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক হামলা-সংঘর্ষ-গোলাগুলি হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত এবং এক মেম্বার প্রার্থীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর করাসহ আগুন দেওয়া হয়।
স্মরণ করা যেতে পারে, কয়েকদিন আগেও নরসিংদীরই রায়পুরায় দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত ও কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছিলেন। নরসিংদী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকেই আহত হয়েছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক স্থানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ওদিকে মেহেরপুরে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই জেলার একটি ইউনিয়নে একজনকে অস্ত্র হাতে নির্বাচনি সভা করতে দেখা গেছে। ইউপি নির্বাচনে অব্যাহত সহিংসতার ঘটনার প্রেক্ষাপটে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন মাঠ পর্যায়ের কয়েক কর্মকর্তা।
তারা বলেছেন, সহিংসতার ঘটনার জন্য দায়ী প্রার্থীদের মধ্যে দু-একজনের প্রার্থিতা বাতিলের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলে তা থেকে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারেন। আমরা এই সুপারিশের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। বস্তুত নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থান গ্রহণ না করলে সহিংসতার প্রবণতা রোধ করা যাবে না।
সব নির্বাচনই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক, এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা তখনই পূরণ হতে পারে, যখন রাজনৈতিক দলসহ নির্বাচনের অন্যান্য অংশীজন তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে।
তবে আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন- এ দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এ দুই প্রতিষ্ঠানই চলমান ইউপি নির্বাচনে তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। ফলে দেখা দিচ্ছে সংঘাত-সহিংসতা। ভোটারদের দায়িত্বও কম নয়, সন্দেহ নেই।
আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচকমণ্ডলী তথা ভোটার শ্রেণি উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দিয়ে আগামী দিনগুলোয় নির্বাচনি পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর রাখার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হবে।