টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উপজেলার ৫নং বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের সকল নেতাকর্মী। গত ২৭শে মার্চ রোববার উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিততে উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও এগারো-টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ আগামী মে মাসে নির্ধারন করা হয়। তার মধ্যে বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আগামী ১০ই মে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় খিলদা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
কিছুদিন পূর্বে দেখাযায়, বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখলেছুর রহমানকে বাদ রেখে খোরশেদ আলম মাষ্টারকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানিয়ে তার নিকট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের চিঠি প্রদানের ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। আজও তার ব্যতিক্রম নয়, বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিকে বাদ দিয়ে তার স্বাক্ষর বিহীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার চিঠি বিতরণ করতে দেখা গিয়েছে। এসকল গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রমের ফলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
আগামী ১০ মে বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলন পূর্ব প্রস্তুতিমূলক আলোচনা ও সিদ্ধান্ত, আসন্ন রমজান উপলক্ষে ইফতার ও দোয়া মাহফিল সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত এবং সম্মেলনের স্থান পরিবর্তন ও সিদ্ধান্ত সহ বিবিধ বিষয়ের উপর আলোচনার লক্ষে শুধু বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোতালেব হোসেনের সাক্ষরিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার পত্র থেকে জানাযায়, আগামী ২৩ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখ রোজ শনিবার সকাল ১০.০০ ঘটিকায় ইছাপুর শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় কক্ষে নিম্ন আলোচ্য সূচী মোতাবেক বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক জরুরি বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত জরুরি বর্ধিত সভায় বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণকে যথা সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির স্বাক্ষর বিহীন চিঠি বিতরণের ফলে ফের নেতাকর্মীদের মাঝে বিশৃঙ্খলা ও বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মজনু বলেন, আমি ওই বর্ধিত সভার বিষয়ে অবগত নই। সভাপতির স্বাক্ষর বিহীন বর্ধিত সভা ডাকা এটা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী, সভাপতির এখতিয়ার ছাড়া শুধু সাধারণ সম্পাদকের সভা ডাকার কোনো এখতিয়ার নেই। দপ্তর সম্পাদক ময়ছের আলী বলেন, সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া শুধু সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরের চিঠিতে আমরা সভায় যাবো না, আমি জরুরী কাজ ঢাকা যাবো। নাম না প্রকাশের শর্তে বাংড়া আওয়ামী লীগের একনেতা জানান, কোনো অবস্থাতেই সভাপতির স্বাক্ষর ব্যতিত একক ভাবে কেউ বর্ধিত সভা ডাকতে পারে না। সভাপতি যদি দল থেকে বহিষ্কার থাকতো তবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির মাধ্যমে সভা ডাকার বৈধতা রয়েছে। বর্ধিত সভাটি গঠনতন্ত্র মোতবেক হয় নাই কারণ বর্তমান সভাপতি সে বহিষ্কৃত না। তার বিরুদ্ধে কারোর সাথে ব্যক্তিগত বিরোধ থাকতে পারে, তবে কারোর ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার জন্য হঠাৎ করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর সাথে পরামর্শ না করে বা কোন প্রকার আলোচনা না করে কিভাবে ইছাপুর শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ধিত সভার আহ্বান করা হলো তা আমরা জানি না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের এক সক্রিয় কর্মী জানান, বর্ধিত সভায় সভাপতির স্বাক্ষর বিহীন চিঠিতে সভা ডাকা হলে আমরা যবো না , সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া বর্ধিত সভা ডাকা যায় না এটা দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী।
বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখলেছুর রহমান বলেন, ওই সভার কোন বৈধতা নাই, এটা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী, স্থানীয় এমপির সাথে আমার মামলার বিরোধ থাকায় এমপি বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মধ্যে বি-শৃঙ্খলা তৈরি করার জন্য গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা কারীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সাধারন সম্পাদককে দিয়ে সভা ডাকিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার বিষয়ে আমি অবগত নই। দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকতে হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারন সম্পাদকের মতামত নিয়ে তাদের উপস্থিতে তাদের সাথে আলোচনা করে সভা ডাকতে হয় । কি কারণে বর্ধিত সভা ডেকেছে? এটা সাধারণ সম্পাদক’ই ভালো জানে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আমি বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার বিষয়ে অবগত না।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জামিলুর রহমান মিরন বলেন, কালিহাতীর বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা সভাপতির স্বাক্ষর বিহীন এককভাবে ডাকা যায় না। সভাপতি/সাধারন সম্পাদক সমন্বয় করে বর্ধিত সভা ডাকতে হয়।