শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

খাস কালেকশনের অর্থ লুট

স্বরূপকাঠির আটঘর হাট ও মিয়ার হাটের ইজারা আদায়ের জন্য খাস কালেকশনের নামে চলছে লুটপাট। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের পুরোনো ইজারা ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে তাদের কাছে বেআইনি মহাল বিক্রির মাধ্যমে খাস আদায় করতে গিয়ে লুটপাট চালাচ্ছেন। ১৪২৭ সনে সরকার মিয়ার হাটের ইজারা মূল্য পায় ২৪ লাখ ২৫ হাজার ১০১ টাকা। অথচ চলতি বছরের গত ১০ মাসে এ হাট থেকে খাস কালেকশন হয়েছে ১৩ লাখ টাকার কাছাকাছি। আটঘর হাটের মূল্য ছিল ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। চলতি বছরের মাঘ মাস পর্যন্ত আটঘর হাট থেকে আদায় হয়েছে আট লাখ টাকার কাছাকাছি। সরকার নির্ধারিত ইজারা মূল্য না পাওয়ায় বাংলা ১৪২৮ সনের জন্য ছোট বড় পাঁচটি হাটের বার্ষিক ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সে কারণে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের (তহশিলদার) নেতৃত্বে খাস কালেকশন করানো হচ্ছে। খাস কালেকশন করতে গিয়ে পূর্বের বছরের মূল্য মানের তুলনায় গত ১০ মাসে ৬০ ভাগ টাকাও আদায় করতে পারেননি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা। ঢাল সিজনের বাকি দেড় মাসে বড়জোর পাঁচ ভাগ টাকা আদায় হতে পারে।

এদিকে তিন লাখ টাকা ইজারা মূল্যের ডুবির হাট থেকে দেড় লাখ টাকাও কালেকশন হয়নি বলে জানান বলদিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. খালিদ হোসেন। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা সরকারি অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি ইজারা লোভী সিন্ডিকেটকে সহায়তা করতে খাস কালেকশনে রাজস্ব আদায় কম দেখান বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুরোনো ইজারা ব্যবসায়ী বলেন, খাস কালেকশনে টাকা আদায় কম দেখানো হলে পরবর্তী বছরের ইজারা মূল্য কমানোর আইনগত পথ সৃষ্টি করা যায়। একাধিকবার খাস কালেকশনের পরের বছর আইগত ঝামেলা এড়িয়ে কম টাকায় ইজারা নিতে পারেন ব্যবসায়ীরা। এভাবেই কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারসাজিতে কয়েক বছর পরপর গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজারগুলোর ইজারা মূল্য কমে যায় এবং সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়।

স্বরূপকাঠিতে রাজস্ব আয়ের উল্লেখযোগ্য হাটবাজার হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ বাণিজ্য বন্দর মিয়ার হাট ও আমড়া, পেয়ারা ও নৌকার হাট খ্যাত আটঘর হাটের গুরুত্ব অপরিসীম। দুদিন সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও মিয়ার হাটে নিয়মিত বড় ধরনের বাজার বসে। হাটের খাস কালেকশন করার সুযোগ পেয়ে কিছু কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেটের পকেট ভারী হচ্ছে। মহাল (ভিট) বিক্রির বিষয় সুটিয়াকাঠি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, মিয়ারহাটের মতো একটি বড় হাটের কালেকশন করতে গিয়ে ২-৩ জন কর্মচারীর পক্ষে শত শত বিক্রেতার থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব হয় না। সে কারণেই জানাশোনা কিছু লোকের কাছে ছোট ছোট মহাল বিক্রির মাধ্যমে একসাথে টাকা আদায় করা যায়। খাস কালেকশনে সাবলিজ দেয়ার বিধান না থাকলেও আটঘর হাটের ইজারা আদায় করতে দেখা যায় ওই এলাকার সুমনের নেতৃত্বে ৩-৪ যুবককে।

সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এত কম মাত্র আট লাখ টাকা আদায় হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বরুন কুমার বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রেষারেষি করে ডাকের সময় দর বাড়িয়ে দেন। উচ্চমূল্যে একবার ইজারা নিয়ে ব্যবসায় লস খেয়ে পরের বছর আর ইজারা ডাকে অংশ নেন না তারা। তখন সরকার বাধ্য হয়ে খাস কালেকশনের জন্য আমাদের ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেন।

আটঘর গ্রামের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসে পেয়ারা, আমড়া, নৌকা ও বাঁশের চাঁই বিক্রির মহাল থেকে কম করে হলেও ১২-১৩ লাখ টাকা কালেকশন হয়।

বাকি সাত মাসে স্বাভাবিক কালেকশন আছে আরও ৬-৭ লাখ টাকা। এসব বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাদের দাঁড়িয়ে থেকে ইজারার টাকা কালেকশন করতে হবে। তিনি বলেন, ছোট ছোট মহাল বিক্রি করা অথবা বহিরাগতদের কাছে কানো ধরনের সাবলিজ দেওয়ার বিধান নেই। খাস কালেকশনে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে, ইউএনও বলেন, চৈত্র মাস শেষ হলেই চূড়ান্ত হিসাব করার পরে বলতে পারবেন।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
ব্রেকিং নিউজ