সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
“আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও/রহিমুদ্দিনের ছোট্ট বাড়ি রসুল পুরে যাও”।
“পল্লীকবি” জসীম উদ্দিনের অমর লেখা আসমানী কবিতায় তিনি যে আসমানীকে তুলে ধরে ছিলেন, সেই আসমানী আজ বেঁচে নেই। তবে ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম (৬০) যেন তারই প্রতিচ্ছবি। রফিকুল ইসলামের থাকার ঘর যেন কবির কাল্পনিক আসমানীদের ঘরকেও হার মানায়। হাওয়ায় নড়বড় করা বৃদ্ধ রফিকুল ইসলামের ঘরটিতে রয়েছে আগুন লাগার ঝুঁকি, রয়েছে সাপ পোকা মাকড়ের ভয়।
রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, বৃষ্টি নামলেই ছাওয়াছুটো ধরি ঘরের এ্যাক কোনাত চুপমারি বসিথাকি, কখন বৃষ্টি থামিবে। বৃষ্টি না থামলে কখনো কখনো সারারাত জাগি থাকি কখন কাডাইটা দেওয়া লাগে। এমনই পোড়া কপাল ধরি জন্মাইছি রোদ্রে পুড়ি আবার বৃষ্টিতেও ভিজি, হেরপরো হামার খবর নেয় না কেউ।
এভাবেই নীলফামারী ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের দিঘলটারী গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে রফিকুল ইসলাম কষ্ট করে বসবাসের কথা বললেন। সে পেশায় একজন দিনমজুর। পরিবার পরিজন নিয়ে এভাবে বসবাস যে কতো কষ্টের তা গৃহহীন ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না। তার ছেলেমেয়ে সহ ছয় সন্তান। তিন মেয়ে ঢাকা শহরে অন্যের বাসায় কাজ করে বিয়ে করে সংসার করছে। ঢাকা শহরে বসবাসরত দুই মেয়ের সন্তান বৃদ্ধ রফিকুল ইসলামের খুপরি ঘরে বসবাস করে।
সরেজমিন দেখা যায়, টিনের/পলিথিনের ঘরগুলোর সামনে থেকে ঘরগুলোর অবস্থা মোটামুটি ভালো দেখা গেলেও ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় মাথার উপরের টিনে মরিচা ধরে অসংখ্য ছিদ্র হয়ে গেছে। ঘরের দরজা, জানালা, বেড়া ভাঙা। সামান্য বৃষ্টি হলে চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। ঘরে থাকা চাল, ডাল, শুকনো খাবারসহ জামা কাপড় ভিজে যায়। বর্ষাকালে রাতে বৃষ্টি হলে সারারাত জেগে চৌকির উপর পলিথিন দিয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোন মতে বসে থাকেন তারা। অভাবের সংসারে পরিবার পরিজনের ভরণ-পোষণ জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর ভাঙা ঘর মেরামত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ অবস্থাতেই রোদ্রে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে অসহায় পরিবারটির দুঃখ কষ্ঠের মধ্যে কোন রকমে জীবন কাটাচ্ছেন।
”আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার” স্থানীয়রা বলছেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি প্রতিটি গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলেও এ বৃদ্ধ দম্পত্তির ভাগ্য এখনও তা জোটেনি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, একরামুল হক চৌধুরীকে একাধিক বার এই বিষয়ে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেন-নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, রফিকুল ইসলাম যেন একটি ঘর পায় সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।