মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন

তালায় ছেলে সরকারী চাকুরীজীবি মা থাকেন ঝুপড়ি ঘরে

জহর হাসান সাগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার তালায় গর্ভধারিণী মা জমি লিখে না দেওয়ায় সরকারী চাকুরীজীবি ছেলের বিরুদ্ধে বসতভিটা হতে বাহির করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিরুপায় হয়ে গর্ভধারিণী মা এখন ঝড়-বৃষ্টির,শীতের মধ্য পলিথিনের ঘরে বসবাস করছেন বলে তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

বৃদ্ধাশ্রম শিরোনামে নচিকেতার গান ছেলে আমার মস্ত বড় মস্ত অফিসার, মস্ত ফ্লাটে যায় না দেখা এপার-ওপার’-এই জনপ্রিয় গানটি আজ বাস্তবে প্রমাণ পওয়া গিয়েছে। কুলসুম বেগম নামক গর্ভধারণী মা ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলেন। নিজে না খেয়ে ছেলে-মেয়ে খাইয়ে অনেক কষ্টে বড় করেছেন। উপযুক্ত সময়ে ছেলেকে বিয়েও করিয়েছেন। কিন্তু বিয়ের পর সরকারী চাকুরীজীবি বড় ছেলে বদলে যায়। কথায় কথায় বউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাকে অত্যাচার-নির্যাতন করা শুরু করে। তারপরও সব অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর ভিটায় মাটি কামড়ে থাকতে গিয়েও থাকা হয়নি কুলসুম বেগমের। নির্যাতনে বিভীশিখা এতই নির্মম যে কুলসুম বেগমকে এখন থাকতে হচ্ছে বাঁশ তলার একটি পলিথিনের ঘরে।এবিষয়ে কুলসুম বেগমের মেয়ে আয়েশা তার ভাই মতিয়ার রহমান গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যশোর ক্যান্টনমেন্ট বরাবর।

অভিযোগের বিষয়ে জানা যায়, তালা সুভাশুনি গ্রামের মনির উদ্দীন গাজীর পুত্র মতিয়ার রহমান গাজী বর্তমানে যশোর ক্যান্টনমেন্ট বার্তাবাহক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি এই সরকারী চাকুরীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পৈত্রিক সম্পর্তি অন্য ভাই বোনদের বঞ্চিত করে ৫৫ শতাংশ জমি লিখে নিয়েছেন। পিতার কাছ হতে জমি লিখে নিয়েও ক্ষ্যান্ত হননি এই নামধারী সন্তান নামক কু সন্তান। মায়ের নামে থাকা ২৬ শতক জমি নিজে নামে লিখে নিতে শুরু করে নানান কলাকৌশল। কলাকৌশলের অংশ হিসেবে মাকে বর্বর নির্যাতন করা সহ বসত ভিটা হতে বাহিরে করে দিয়েছেন কু-সন্তান। মা নিরুপায় হয়ে পাশে একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে বসবাস করছেন।

মতিয়ার রহমান গাজীর বোন আয়েশা বেগম জানান, আমার ভাই সরকারী চাকুরী করার সুবাদে এলাকায় এসে সেনা সদস্য পরিচয় দেওয়া সহ সাধারণ মানুষের প্রতি মানসিক ভাবে নির্যাতন দিয়ে থাকেন। এমনকি আমাদের ভাই-বোনদের পৈত্রিক সম্পর্তি হতে বঞ্চিত করে নিজ নামে জমি লিখে নিয়েছেন। এখন মায়ের কাছে থাকা ২৬ শতক জমি লিখে নিতে নানান রকম অপকৌশল করতে থাকেন। সর্বশেষ মাকে রাজি না করাতে পেরে তার বসতভিটা হতে বাহির করে দেন। নিরুপায় হয়ে আমার গর্ভধারিনী মা কুলসুম বেগম বাঁশ বাগানের মধ্যে পাটখড়ির বেড়া ও পলিথিনের চাল দিয়ে তৈরি ঘরে বসবসা করছেন। এই তীব্র শীতে আমার বৃদ্ধা মা ওই পলিথিনের ঘরে অনেক কষ্ট পাচ্ছে জানতে পেরে মাকে সেখান থেকে আমার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে এসেছি।কিন্তু মা তার স্বামীর ভিটায় থাকবে বলে পুনরায় ঝুপড়ি ঘরে ফিরে গেছেন। এবিষয়ে আমি সহ গ্রামের লোকজন নিয়ে আমার ভাই মতিয়ারের কাছে জানতে চাইলে বলেন, মায়ের নামে থাকা জমি তার নামে লিখে না দিলে সে মাকে ঘরে উঠতে দিবে না এবং খাওয়া-পরা দিবেনা।

গর্ভধারণী মা কুলসুম বেগম বলেন,আমার ২ ছেলে ২ মেয়ে আছে।আমার সকল সম্পর্তি সমান ভাবে সবাইকে দিতে চাই। কিন্তু আমার ছেলে মতিয়ার রহমান তার অন্য সব ভাই বোনদের সম্পর্তি দিতে রাজি না।তাই আমাকে বাড়ি হতে বের করে দিছে আমার ছেলে মতিয়ার। আমি এখন ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করি। অনেক কষ্টে আছি।

অভিযোগের বিষয় সরকারী চাকুরীজীবি মতিয়ার রহমান গাজী বলেন,আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি সরকারী চাকুরীজীবি হওয়ার সুবাদে আমাকে হেনস্তা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
ব্রেকিং নিউজ