বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন

তিস্তা লন্ডভন্ড ॥ প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি

উজানের ঢলে রুদ্ধমূর্তি ধারন করা তিস্তা নদী অববাহিকা লন্ডভন্ড হয়েছে। স্মরনকালের এমন বন্যা ও ভাঙ্গন এলাকাবাসীকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। চারিদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের শুধু আহাজারী আর আহাজারী । নারী পুরুষদের গগন বিদারক কান্না আকাশ বাতাস ভারী করে তুলেছে। উজানের প্রচন্ড গতির পানির চাপে খুলে (ওপেন) গেছে ফ্লাড ফিউজ(ফ্লাড বাইপাস)। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অবকাঠামো চর এলাকার বসতবাড়ি ও ফসলের প্রায় শতকোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

বুধবার (২০ অক্টোবর) ভোর থেকে উজানের এমন ঢলে প্রথমে বিধ্বস্থ হয় জিরো পয়েন্টে ভারত বাংলাদেশের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রোয়েন বাঁধ। ওই বাধটি বিধ্বস্থ্য হলে ৩ শতাতিক বসত ঘর, আসবাবপত্র, ফ্রিজ টেলিভিশন মোটরসাইকেল ভেসে যেতে থাকে। এরপর সকাল ১১টায় দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ ( ফ্লাড বাইপাস) পানির তোড়ে ওপেন হয়ে গেলে চরম হুমকীতে তিস্তা ব্যারাজ রক্ষা পায়। সংশ্লিষটরা জানায় ৬৯৬ মিটার দীর্ঘ এই ফ্লাডফিউজের আড়াইশত মিটার ওপেন হয়ে যাওয়ায় নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ( উত্তরাঞ্চল) জ্যোতি প্রসাদ বলেন স্মরনকালের এই বন্যায় তিস্তা ব্যারাজ ও নদী রক্ষার প্রায় ৯টি স্পার্ক, ক্রস ও গ্রোয়েন বাঁধ বিধ্বস্থ্য হয়ে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করেছে।

এদিকে তিস্তার বন্যায় চরের শতশত হেক্টরের ভুট্টা, উঠতি আমন ধান,শাক সবজী, পুকুরের মাছ, বসতঘর ও আসবাসপত্র ভেসে গেছে ও বিনস্ট হয় প্রায় আরও ৫০ কোটি টাকা। যা তিস্তার লন্ডভন্ডে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।

এদিকে উজানের ঢলের পর পরেই তিস্তার এই বন্যায় নীলফামারী জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সর্ভিস,বিজিবি দ্রুত ছুটে গিয়ে অসংখ্য পরিবারকে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে।

জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান জানান, প্রাথমিক ভাবে ডিমলা উপজেলায় জিআর এর ৪০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা ও ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলোকে ডান তীর বাঁধ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় ও শুকনা খাবার বিতরন করা হচ্ছে।

ডিমলা উপজেলা ফায়ার সর্ভিসের ইনচার্জ এটি এম গোলাম মোস্তফা জানান, তিস্তার বন্যায় চর এলাকায় আটকা পড়া অসংখ্য পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে আনার কারনে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারীর ডালিয়ার বন্যা পুর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্রের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা ৬টার পর তিস্তার পানি বিপদসীমার (৫২.৬০) ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে সকাল ৬টায় ৫০ সেন্টিমিটার, ৯টায় ৬০ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ৭০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফুদ্দৌলা বলেন,তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি লাল সংকেত অব্যাহত রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
ব্রেকিং নিউজ