১৯৯৬ সালের নির্বাচনে রহমান বিশ্বাসের ছেলে নাসিম বিশ্বাস দলীয় টিকিটে এমপি হন। নাসিমের মৃত্যুর পর আবারও উপনির্বাচনে দলীয় এমপি হন সরোয়ার। সব মিলিয়ে টানা প্রায় ৩০ বছর ধরে বরিশাল বিএনপি মানেই মজিবর রহমান সরোয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরিশালে সরোয়ারের ‘রাজত্বের’ সমাপ্তি টানল বিএনপি।
গতকাল বুধবার বরিশাল মহানগর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে মজিবর রহমান সরোয়ারকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। বরিশাল মহানগর ছাড়াও সাংগঠনিক জেলা উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিরও কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এসব কমিটিতেও সরোয়ারের কোনো অনুসারীকে রাখা হয়নি।
জানতে চাইলে গতকাল বিকালে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, আমি শুনেছি বরিশালের কমিটি দিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে। যেখানে পার্টি বলছে- সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হবে। আমি তো সেই আশাতেই আছি। রাজনীতিতে এটি তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে যারা সক্রিয় ছিল তারা বাদ পড়েছেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মহানগর সভাপতি, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও বরিশাল সিটি মেয়র এবং এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ ছিলেন। সরোয়ার বলয়ের বাইরে অনেকেই বরিশাল বিএনপিতে পদ পেয়েও টিকতে পারেননি।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে ‘এক নেতার এক পদ’ দলের গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হয়। ওই কাউন্সিলের পর সরোয়ার দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হন। এর পর দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার তাকে বরিশাল মহানগর সভাপতি পদ ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু কারও কথায় কর্ণপাত করেননি সরোয়ার। সর্বশেষ গত মাসে তার অনুসারীদের ঢাকায় দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে পাঠিয়ে তদবিরও করেন।
বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, বরিশালে সব সময়ই সরোয়ারবিরোধী শক্ত একটি গ্রুপ ছিল। কিন্তু ভয়ে দৃশ্যমান হতো না। সর্বশেষ দৃশ্যমান হওয়ার পর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজন হামলার শিকার হলে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবস্থান বুঝে সরোয়ারের বিরুদ্ধে ছাত্রদল, যুবদলের সাবেক নেতারা সক্রিয় হন।
এর মধ্যে তারেক রহমানও বিভিন্ন মাধ্যমে মাঠ জরিপ করেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নেন। সবাই তাকে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন বলেই মত দেন। সেখানে সব পক্ষকে রেখে কমিটি করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বরিশাল জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ঢাকায় আনতে বাধ্য হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই আলাল পরে যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। বরিশাল বিএনপির নতুন কমিটি বিষয়ে গতকাল তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আবারও নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বরিশালের কমিটিতে দেখলাম তরুণ ও যোগ্যদের স্থান দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপিরও কমিটি ঘোষণা করা হয়। বরিশাল মহানগরে নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক হয়েছেন মনিরুজ্জামান ফারুক, ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার বাবুল ও সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ। তারা সবাই সরোয়ারবিরোধী হিসেবে পরিচিত।
বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হয়েছেন মজিবর রহমান নান্টু ও সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেবুল। উত্তর জেলার আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুল। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হয়েছেন মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান।