শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন

মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ

বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর ৪টি স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে একটি চক্র। চক্রটি প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লাখ ঘটফুট বালু উত্তোলন করছে। প্রায় ১ বছরে ধরে চক্রটি প্রতিদিন বালু উত্তোলন করে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে করে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙ্গণের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এর প্রেক্ষিতে গত ৬ ডিসেম্বর মেঘনা নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু এবং মাটি উত্তোলন বন্ধ করার দাবিতে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নদী ভাঙ্গা কমিটির পক্ষে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাখিলকৃত ওই আবেদন সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালুবহাল বন্ধে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নদী ভাঙ্গা কমিটির পক্ষে ওই আবেদনটি করেছেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব শট্টি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম সরদারের ছেলে মিজানুর রহমান লালু হাওলাদার, তেতুলিয়ার জাহিদ হাসান, উলানিয়ার তারেক সরদার, আবু মাঝি, শাহাবুদ্দিন, জসিম, লিটনসহ স্বাক্ষরিত১৬৯ জন সদস্য।

মেঘনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকায় বাধ নির্মাণে সরকার কর্তৃক ৩৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত ভেরী বাঁধটিও রয়েছে ঝুঁকির তালিকায়। চক্রটির তাদের নিজেদের স্বার্থে লাভবান হওয়ার জন্য অবৈধ বালু উত্তোলন করার কারণে উপজেলার মেঘনা নদী কবলিত জনগণের বসতবাড়ি, ফসলি জমি, বিলীন হতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য উপজেলার ১৩নং গোবিন্দপুর ইউনিয়ন নদী গর্ভে বিলিন হয়ে নতুন চরে পরিণত হয়েছে। ওই সমস্ত এলাকায় বালু দস্যুরা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ক্ষতির মুখে পড়া স্থানীয়রা পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়সহ স্থানীয় এমপি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগের অনুলিপি প্রেরণ করেন।

অভিযোগে আরও জানা যায়, মেহেন্দিগঞ্জের পানবাড়িয়া এলাকার বালু দস্যু নেজামুলের নেতৃত্বে একটি চক্র দিন রাত ২৪ ঘন্টা বালু উত্তোলন করছে। তবে দিনের চেয়ে রাতে বেশি বালু উত্তোলন করা হয়।

চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছে: আজিজ মোল্লার ছেলে মিজান মোল্লা, রোমান মোল্লা, বেলাল মোল্লা, জামাল মোল্লা ও উলানিয়া এলাকার মৃত হাফেজ বেপারীর ছেলে আমিনুল ইসলাম, এচাহাক মাঝির ছেলে কবির মাঝিসহ অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজন মেঘনা নদীর মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া লঞ্চঘাট থেকে সোজা মেঘনার মধ্যখানে, দক্ষিণ উলানিয়ার লালগঞ্জ স্কুলের সামনের পশ্চিম পাশের রাস্তা দিয়ে লঞ্চঘাটে দেওয়ান বাড়ির পাশে নদী, রলদী/পালপাড়া গোলপাড় রকমান মাঝির বাড়ির পশ্চিম পাশের নদী ও উত্তর উলানিয়া ইউসুফ চৌধুরীর বাড়ির পিছনে গোলের মধ্যে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। দীর্ঘ ১০ থেকে ১১ মাস যাবত বালু দস্যু নেজামুলসহ তার সহযোগীরা অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করলেও প্রশাসনের দৃষ্টি আসেনি।

অভিযোগ রয়েছে, তারা লোকাল থানা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রায় বছর ব্যাপী বালু উত্তোলন করে আসছে। নেজামুল শুধু বালু দস্যুই নয় সে একজন ভূমিদস্যু ও। নিজামুলের ভয়ে মেঘনা নদী কবলিত এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে হামলা মামলা ও খুন-জখমের ভয়-ভীতি দেখানো হয়।

নদী ভাঙন রোধ কমিটির সদস্য স্থানীয় মিজানুর রহমান লালু হাওলাদার জানান, মেহেন্দিগঞ্জ নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। উপজেলার মেঘনা নদীর চারটি স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে প্রায় বছর ব্যাপী বালু উত্তোলন করে আসছে নেজামুল ও তার সহযোগীরা। নিজামুল একজন বালু দস্যু। নদীর কবলিত আশেপাশে থাকা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করে আসছে। আমরা প্রশাসনের নিকট বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে আবেদন করেছি।

নদী ভাঙ্গন রোধ কমিটি অন্য সদস্য জাহিদ হাসান জানান, মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পরবো। বালু উত্তোলন ও মাটি বন্ধের দাবিতে চলতি বছরের ১৬ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথ ভূমি মন্ত্রী বরাবরে একটি আবেদন করেছি। এর পূর্বে ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি একটি ডিউলেটারের মাধ্যমে চাঁদপুর-বরিশাল সীমানা নির্ধারনের জটিলতা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মেঘনা নদী হইতে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন। কিন্তু সকল আইনের নিয়মকানুন কে তোয়াক্কা না করে বালু খোকা নেজামুল ও তার সহযোগীরা দেদারছে বালু উত্তোলন করে আসছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জ নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে চক্রের অন্যতম নেজামুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কথা অস্বীকার করে বলেন এসব কিছুই জানেন না।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক আলী হায়দার জসিম তার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
ব্রেকিং নিউজ