মাসুদ আলী পুলক রাজশাহী ব্যুরোঃ-
রাজশাহীতে শিশু ভাতার নামে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণা অভিযোগ নারী মুক্তি সংস্থার বুলু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাজশাহীতে শিশু ভাতার নামে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণা অভিযোগ নারী মুক্তি সংস্থার বুলু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে
৬ হাজার ৫০০ টাকা দিলে তিন মাস পরে তিন কিস্তিতে দেয় হবে ৪০ হাজার টাকা। এমন প্রচারণা চালিয়ে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের দিনমুজুর, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, বাসাবাড়িতে কাজ করা নারী, গবির অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের কয়েক হাজার মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণা করেছে “নারী মুক্তি সংস্থা” নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মোসাঃ শাহানারা বেগম (বুলু) ও তার সহযোগীরা।
প্রতিষ্ঠানটি মহানগরীর রাজপাড়া থানার চন্ডিপুর এলাকায় অবস্থিত।
এ ঘটনায় নগরীর মতিহার থানার বুধপাড়া এলাকার ও কাটাখালী থানার মহনপুর এলাকার বাসিন্দা “নারী মক্তি সংস্থা’র” মাঠকর্মী দুই নারীর বাড়িতে টাকা উদ্ধারে হানা দেয়ে স্থানীয়রা। পরে তাদের পক্ষে পরিবারের লোকজন লিখিত দিলে স্থানীয়া ফিরে যায়।
তারা হলেন, মহানগরীর কাটাখালি থানার মোহনপুর এলাকার মোসা: শিলা বেগম (২১) ও মতিহার থানার বুধপাড়া এলাকার মোসা: হাসি আকতার (২৫)।
এ ব্যপারে ওই দুই নারী বাদী হয়ে রাজপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের বরাত দিয়ে জানা যায়, মহানগরীর রাজপাড়া থানাধীন নারী মুক্তি সংস্থায় অনিয়মিত চাকুরীতে নিয়োগ পান তারা। তাদের কাজ হলো পথশিশু ও কর্মজীবি শিশুদের কর্মদক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রাহক সৃষ্টি করা এবং গ্রাহক প্রতি ৬,৫০০/- টাকা হারে নেওয়া। সেই সাথে টাকা উত্তোলনের জন্য অর্থ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা।
তাদের বলা হয় গ্রাহকদের বলতে হবে ৬,৫০০/- টাকা দিলে ৩ মাস পরপর ৩ কিস্তিতে মোট ৪০,০০০/- টাকা গ্রাহককে প্রদান করা হবে। সেই সাথে গ্রাহক প্রতি ৫০০/- টাকা হারে মাঠকর্মীদের দেবেন বুলু। কিন্তু প্রায় তিন বছর হলো গ্রহক এবং মাঠ কর্মীদের কোন টাকা দেন নাই শানারা বেগম বুলু।
টাকার কথা বললে মাঠকর্মী দুই নারীকে বিভিন্ন ধরনের আশ্বাস দিচ্ছে ও তালবাহানা করছেন তিনি। ইতিমধ্যেই গ্রাহকরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাঠকর্মী হাসি ও শিলার বাড়ির লোকজনকে রাস্তাঘাটে ধরে এবং বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করছে।
হাসি জানায়, আমি ২০১৯ সালে মাঝামাঝি সময় ১০০ জন গ্রহকের কাছ থেকে ৬,৫০০ টাকা করে মোট ৬লাখ ৫হাজার টাকা তুলে দিয়েছি। তিন মাস পরে গ্রহকদের তিন কিস্তিতে ৪০ হাজার টাকা দেয়ার কথা শাহানারা বেগম বুলুর। কিন্ত প্রায় তিন বছর হলেও একটি টাকাও দেয়নি। শুধু মিথ্যা কথা আর মিথ্যা আশ^াস দিচ্ছেন তিনি। এছাড়া গত প্রায় ১ বছর হলো ঢাকায় পালিয়ে বসে আছে বুলু।
কিন্তু বিক্ষুদ্ধ গ্রহকরা টাকার জন্য তাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি গালিগালাজ নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা আমার বড়িতে এসে ঘরের মালামাল নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করে। শেষ পর্যন্ত তাদের হাতে পায়ে ধরে সময় নেই। গ্রহকরা আমার কাছ থেকে কাগজে সহি নেয়। সেই সাথে অল্প সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয় বরৌ জানান হাসি।
তিনি আরও বলেন, শাহানারা বুলু’র লোক মতিহার থানার মৌলভী বুধপাড়া গ্রামের মোঃ আসাদের স্ত্রী মোসাঃ তানজিলা বেগম (৪৫), এবং তারই আপন ভাই হাদির মোড় এলাকার মোঃ কামরুজ্জামান কামু (৪০) তারই আমাকে নারী মুক্তি সংস্থার বুলুর কাছে নিয়ে গিয়ে আমার এই সর্বনাশ করেছে। এরা দুই ভাইবোন বুলুর সাথে জড়িত।
ভুক্তভোগী শিলা জানায়, আমি ৭০জন গ্রহককে নারী মুক্তি সংস্থার নামে ৬,৫০০ টাকা হারে মোট ৪ লাখ ৫৫ হাটার টাকা দেই। কিন্তু এখন আমার জিবন দেয়া ছাড়া উপায় নাই। আমি গরিব মানুষ। স্বামী দিনমুজুর। পেটের দায়ে তানজিলা আর কামু মাধ্যমে মাঠকর্মীর চাকরি নিয়েছিলাম । তারা শাহানারা বুলুর লোক। তারা দিব্যি ভালো আছে। আর গ্রহকদের কাছে আমি লাঞ্ছিত হচ্ছি। গ্রহকদের কথা শুনতে শুনতে জিবনটা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। জিবনটা মূল্যহিন মনে হচ্ছে। বিচারের আশা মানুষের দারে দারে ঘুরছি। কোথা থেকে দেবো এতগুলো টাকা ভেবে পাচ্ছিনা। শেষ পর্যন্ত কি করবো জানিনা।
মঙ্গলবার দুপুরে জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, অভিযোগ পেয়েছি। থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই কাজলকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে মহানগরীর মতিহার থানার পাওয়ার হাউজ পাড়া এলাকায় টাকা নিতে শম্পা ও বর্ণার বাড়িতে শতাধিক গ্রহক হানা দেয় । পরে স্থানীয়রা মতিহার থানায় ওসি মোঃ আনোয়ার আলী তুহিনকে ফোনে জানায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এসআই আকবর ও সঙ্গীয় ফোর্স। পরে তারা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং থানায় গিয়ে অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।
পাওয়ার হাউজপাড়া এলাকার শম্পা ও বর্ণা নামের দুই নারী জানায়, আমরা নারী মুক্তি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহানারা বেগম বুলুর লোক ধরমপুর এলাকার মৃত হাসেমের ছেলে মোঃ শামীম হাসান অনতুকে ৩০০ জন গ্রহকের কাছ থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ১৯ লাখ ৫০হাজার টাকা দিয়েছি। বর্তমানে গ্রহকরা আমার বাড়িতে এসে বিভিন্ন রকম কথা শোনাচ্ছে। প্রতিবেশিরা সহযোগীতা না করলে আমাদের এতদিন মারধর খেতে হতো।
তিনি আরও বলেও এই অনতুকে কাজলার বেশ কয়েকজন নারী মিলে ৬২০ জন গ্রহকের কাছ থেকে মোট ৪০ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছে। কিন্তু গ্রহকদের টাকা ফেরত দেয়ার কোন আগ্রহ তার নাই। টাকা চাইলে উল্টা খারাপ ব্যবহার করে অনতু। আমরা গ্রহকদের টাকা দেবো কোথা থেকে।
জানতে চাইলে নারী মুক্তি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোসাঃ শাহানার বেগম (বুলু) জানান, আমি মোট ৪ হাজার গ্রহকের টাকা পেয়েছি । বিদেশি সংস্থার টাকাকা দিবে। করোনার জন্য টাকা আটকে আছে। রমজান মাসেই সকল গ্রহকের ভাতার টাকা পরিশোধ করা হবে। ১বছর পালিয়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকাটা দ্রুত পাওয়ার জন্য ঢাকায় থাকছি। টাকা এ্যাকাউন্টে ঢুকলেই রাজশাহী ফিরবো বলে জানান তিনি।