ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে একটি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মৃতদের স্বজনদের আহাজারিতে নদীপাড়ের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সবশেষ নয়জনসহ ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও ফায়ারসার্ভিসের সদস্যরা।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপরে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত কুমার দে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রী ছিলো বরগুনার। আগুন থেকে বাঁচতে এদের মধ্যে অনেকে নদীতে লাফ দিয়েছিলেন। নিখোঁজের উদ্ধারে সার্ভিসের একটি ও কোস্ট গার্ডের দুটি দল অভিযান পরিচালনা করছেন।’
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযান লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতদের মরদেহ উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা ও ঝালকাঠির কোস্টগার্ড সদস্যরা কাজ করছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
তবে নিহতদের মধ্যে বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের মো. রিয়াজ (২৩) এবং বরগুনার সদর উপজেলার ফুলঝুরি ইউনিয়নের ৮ বছরের শিশু তাইফার পরিচয় নিশ্চিত করেছ তার স্বজনেরা। এ ঘটনায় শিশুটি মারা গেলেও গুরুতর আহত অবস্থায় বেচেঁ আছেন তার বাবা বশির।
এদিকে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ ৮০-৯০ জন বরিশাল, ঝালকাঠিসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে বরিশালের বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় সেখানে দগ্ধ রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক যাত্রী ও তাদের স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লাগে। আকস্মিকভাবে ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের লেলিহান শিখা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুন ও এর সঙ্গে ধোঁয়ায় লঞ্চ আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে প্রাণে বাঁচাতে অনেকেই লঞ্চ থেকে নদীতে লাফ দেন। এ সময় লঞ্চের ভেতরে থাকা যাত্রীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। তাদের ধাক্কায় ও পায়ের নিচে পদদলিত হয়ে অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যাত্রীরা দিশেহারা হয়ে ডাক-চিৎকার দিতে থাকেন। যে যেভাবে পেরেছেন আত্মরক্ষার চেষ্টা চালিয়েছেন। অনেকেই স্বজনদের রেখে নদীতে ঝাঁপ দেন।
নিচতলার ইঞ্জিন রুম সংলগ্ন এলাকায় যেসব যাত্রী ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওয়ানা হন তারাই বেশি দগ্ধ হন। এ সময় কয়েকজনকে শরীরে আগুন নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
লঞ্চের যাত্রী শিমুল তালুকদার জানান, তিনি ছাত্রদলের কর্মী সভায় যোগ দিতে ঢাকা থেকে বরগুনার বেতাগীতে ফিরছিলেন। ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালের ঠিক আগে গাবখান সেতুর কিছু আগে লঞ্চের ইঞ্জিনরুমে আগুন লেগে যায়। এরপর সেই আগুন পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। জীবন বাচাতে তিনি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠেন। তবে অনেকেই লঞ্চে রয়ে যায়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে নদীতীরে স্বজনরা ভিড় করছেন। এই ভিড় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে। বাড়ছে নদীর তীরে স্বজনদের আহাজারি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই জানেন না তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে।
লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরা বরগুনার তালতলী উপজেলার মোস সোনিয়া বেগম (২৫) নামের এক যাত্রী আহাজারি কণ্ঠে জানান, লঞ্চে আগুন লাগার সময় তিনি ইঞ্জিন রুম ওপরে দোতলার ডেকে অবস্থান করছিলেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ডেক গরম হয়ে চারিদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এরপর লঞ্চের সঙ্গে বাঁধা দড়ি বেয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে নিচে নেমে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে তার মা রেখা বেগম এবং ৫ বছরের বড় ছেলে জুনায়েদ সিকদার এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন।