শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

সুবর্ণচরে অতিরিক্ত সেশন ফি আদায়ের নামে চলছে শিক্ষা বানিজ্য।

আহসান হাবীব স্টাফ রিপোর্টারঃ-

সুবর্ণচর উপজেলার কয়েকটি বেসরকারি হাই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির নামে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। পুনঃ ভর্তির ক্ষেত্রেও একইভাবে অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে ওই বিদ্যালয়গুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন ফি এর নাম করে বাণিজ্য করছে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ।

প্রতিবছর এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুনঃ ভর্তি ফি, সেশন ফি বা একাডেমিক ফি বা অন্য কোনো নামে ফি আদায় করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ে আদালত বলেছেন, শ্রেণি পরিবর্তন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বার্ষিক পুনঃ ভর্তি ফি বা সেশন ফি নেওয়া বেআইনি।

এ-সংক্রান্ত পৃথক দুটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছর ও তিন বছর আগে হওয়া রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হয়।

আদালত দেশের সব স্কুলে দেশীয় সংস্কৃতি অনুসারে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় দিবসগুলো পালন, বঙ্গবন্ধু ও দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানানো এবং শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার ওপর গুরুত্ব দেওয়াসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।

রায়ে ১৯৬২ সালের বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন অধ্যাদেশ ও ২০০৭ সালের বেসরকারি (ইংরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা অনুসারে দেশের প্রতিটি ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা– প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা কমিটি (ম্যানেজিং কমিটি) করা এবং তাতে অবশ্যই অভিভাবক প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়েছে।

আদালত বলেছেন, ব্যবস্থাপনা কমিটি স্বচ্ছতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ও বেতন নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত ভর্তি ফি কেন নেওয়া হচ্ছে তাও অভিভাবকদের জানাবে। মাসিক টিউশন ফি বাড়াতে হলে অভিভাবকদের মতামত নিতে হবে। ফি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যিনি অভিভাবক প্রতিনিধি থাকবেন, তাঁর মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তাঁর মতামত উপেক্ষা করতে হলে, যুক্তিসংগত কারণ দেখাতে হবে।

রায়ে বলা হয়, ব্যবস্থাপনা কমিটিই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেবে। শিক্ষক যে বিষয়ের ওপর ডিগ্রি অর্জন করেছেন, সে বিষয় পড়াবেন।

ভর্তিবাণিজ্য বন্ধে আদালতের নির্দেশনা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা থাকার পরও সে সব পরোয়া করছে না সুবর্ণচরের অধিকাংশ বিদ্যালয়। অপেক্ষাকৃত ভালো স্কুলে নিজ সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে এ ভয়ে এসব অনিয়ম নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না অভিভাবকরাও।

অভিভাবকদের অধিকাংশই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ভর্তি ফি, পুনঃভর্তি ফি, সেশন ফি, টিউশন ফির পাশাপাশি অনুল্লিখিত খাতেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদায় করছে অতিরিক্ত অর্থ।
বছর বছর এ ফি বাড়ানো হচ্ছে। ফলে বছর বছর হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের ‘মিনিমাম কস্টের ম্যাক্সিমাম এডুকেশন’।

স্কুলগুলোতে লাগামহীন ভর্তিবাণিজ্য ঠেকাতে ২০১৭ সালের মে মাসে হাইকোর্ট স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। যেখানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় ভর্তি বা সেশন ফির নামে অর্থ আদায় নিষিদ্ধ করা হয়। নির্দেশনাগুলো পরিপত্র আকারে জারি করে সব ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পাঠানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশও দেওয়া হয়। এর পর থেকে সরকারি স্কুলের পাশাপাশি বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কিন্তু অন্যায্যভাবে পুনঃভর্তিসহ অযৌক্তিক সেশন ফি ও অপ্রদর্শিত খাতে প্রচুর অর্থ আদায় করা হচ্ছে অভিভাবকদের কাছ থেকে।
কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, বছর বছর স্কুলে ভর্তি ফি, পুনঃভর্তি, সেশন ও টিউশন ফি বেড়ে চলেছে। যা আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের পক্ষে চালিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে চেষ্টা করছি ভালো স্কুলে পড়ানোর জন্য। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নিষেধ থাকার পরও স্কুল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। এর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখায় না।

এদিকে বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিবাণিজ্য বন্ধ করতে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ভর্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়মবহির্ভূত এবং অন্যায় কাজ। বিধিবহির্ভূতভাবে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি আদায় করে এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্কুলগুলোতে ভর্তির নামে অতিরিক্ত ফি আদায় হচ্ছে কি না তা তদারক করার জন্য মাঠে ১১টি টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক সরকার আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, বাড়তি ফি আদায় করে কেউ পার পাবে না। সবাইকে বাড়তি ফি ফেরত দিতে হবে। তিনি জানান, এরই মধ্যে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, নানা কৌশলে আমাদের টিম সেখানকার তথ্য সংগ্রহ করছে। এরপর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

ভর্তিবাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস- এসব রোধ করা না গেলে জাতি মেধাহীন হয়ে পড়বে, সৎ-যোগ্য শিক্ষক ও নাগরিকদের সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা না গেলে ভর্তিবাণিজ্য রোধ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সচেতনমহল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
ব্রেকিং নিউজ