শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন

সুবর্ণচরে শিমগাছে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

 

কামাল চৌধুরী, নোয়াখালী থেকে :

শুরু হয়ে গেছে শীতকাল। বাজার আসতে শুরু করেছে শীতকালিন সবজি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মত নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলেও নানা সবজি চাষ করে কৃষক ।
তারই ধারাবাহিকতায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নানা ধরনের সবজির চাষ হলেও এ বছর কৃষকেরা অন্যান্য সবজির তুলনায় শিম চাষ করেছেন বেশি ।
সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের চর বায়োজিদ গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিশাল এলাকা জুড়ে করা হয়েছে শিমের চাষ। পুকুরপাড়, জমির পাশ, খালপাড়, বেড়িবাঁধ ও পাকা সড়কের দু-পাশে দেখা মেলে শুধু শিম আর শিম। ফলনও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি।
ফলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এ অঞ্চলের শিম যাচ্ছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে।

স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে শিম বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছে কৃষকেরা। এতে মহা খুশি এ অঞ্চলের কৃষকেরা । বর্তমানে এখানকার বাজারে প্রতি কেজি শিমের পাইকারী বাজার মূল্যে ২৫/৩০ টাকা। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে ।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি অফিসার মো: হারুন অর রশীদ জানান, এ বছর সুবর্ণচর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করেছে কৃষকেরা। আশা করা হচ্ছে প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৩২ টন শিম উৎপাদন হবে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় উৎপাদনের ধারণ ক্ষমতা অতিক্রম করেছে। এখানে চাষকৃত শিমের জাতগুলো হচ্ছে – লাইট্যা, বাইট্যা, পুঁটি, ছুরি ইত্যাদি।
এগুলোর মধ্যে লাইট্যা শিমের ফলন সবচেয়ে ভালো হয়েছে। তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায় সুবর্ণচর উপজেলার প্রায় তিন হাজারেরও বেশি চাষি এ বছর শিম চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান ছাড়াও গ্রামের গৃহস্থরা ঘর-বাড়ি ও সড়কের দু-পাশে শিমের চাষ করেছেন। যার ফলে অনেকে নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মিটানোর পর বাজারেও শিম বিক্রি করছেন। যার হিসাব কৃষি অফিসে নেই।

স্থানীয় শিম চাষী খালেক মিয়া জানান, এ বছর শিম চাষ করে তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন। এ সবজি চাষে মাত্র তিন মাস সময় দিয়ে ভালো আয় করা যায়। অপর চাষী রেনু মিয়া জানান, এক একর জমিতে ২০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শিম চাষ করে তিন মাসের মাথায় প্রায় সোয়া লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন তিনি। রেনু মিয়া আরো বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা না থাকায় নিজের মতো করে চাষ করে এ পরিমাণ লাভবান হয়েছি। তবে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ পেলে আরো ভালোভাবে উৎপাদন এবং অধিকহারে লাভ করা যেত।

জেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জানান, তরমুজ, সয়াবিন ও অন্যান্য রবি শস্যের পর সুবর্ণচরের চাষকৃত শিমও দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময়ী হয়ে উঠেছে গত কয়েক বছর ধরে। এ উপজেলার শস্যের ভান্ডারে খ্যাতির মাত্রায় নতুন তকমা যোগ হয়েছে শিম। কারণ এখানকার মাটি শিম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগি।
তবে কৃষকেরা অতিরিক্ত ফলনের আশায় অধিকহারে কিটনাশক প্রয়োগের ফলে শিমের গুণাগুন হ্রাস পাচ্ছে। সঠিকভাবে প্রতিনিয়ত শিম চাষ করা গেলে এখানকার শিম দেশে এবং দেশের বাহিরে বাজারজাতকরণের মধ্যে দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকার রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে। চাষ এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কীটনাশক ব্যবহার রোধে এ অঞ্চলের শিম চাষীদেরকে কৃষি অফিস থেকে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
ব্রেকিং নিউজ