শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন

সিএমপিতে টি আই শামসুদ্দিনের চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য !

 

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশ পথ নগরীর শাহ আমানত সেতু।পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞাকে রীতিমত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই সেতু হয়ে প্রতিদিন নগরে

প্রবেশ করছে শতশত অবৈধ সিএনজি।

অভিযোগ আছে, ট্রাফিক পুলিশ,কথিত সাংবাদিক ও ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ধারী নেতারা চাঁদা নিয়ে এসব যানবাহনকে শহরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে

দিয়ে বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।আর এসব যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো শহরজুড়ে,সংগঠিত করছে নানা অপরাধকর্ম।

এবিষয়ে অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।অনুসন্ধানে উঠে আসে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক

দক্ষিণ বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) সামশুদ্দিনের দৌরাত্ব্যের কথা।অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো প্রচারের পর কিছুটা টনক নড়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের নীতি নির্ধারকদের।সামশুদ্দিনের পাঁচ বছরের সাম্রাজ্যের অবসান ঘটিয়ে পেট্রোল ইন্সপেক্টর হিসেবে কোতোয়ালি জোনে তাকে বদলী করা হয়।

কিন্তু ঘুরে ফিরে কর্মস্থল সিএমপির মধ্যে থাকায় সামশুদ্দিনের দৌরাত্ব্য কতটা বন্ধ হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।

সিএমপি সূত্র জানায়, অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকার সংবাদ দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর টিআই সামশুদ্দিনকে বদলী করা হয়েছে।

তবে সিএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন,নিয়মিত বদলীর অংশ হিসেবে পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর টিআই সামশুদ্দিনকে

পেট্রোল ইন্সপেক্টর হিসেবে বদলী করে কোতোয়ালি জোনে সংযুক্ত করেন।

তবে এই কোতোয়ালি জোনে সংযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে যুক্ত হয়েছে চাঁদাবাজির নতুন মাত্রাও।সড়কের ধারে ধারে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের বসিয়ে

আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।টিআই শামসুদ্দিনের আগের কর্মস্থলের মানুষ কিছুটা স্বস্ত্বিতে দিন কাটালেও চাঁদার দিতে দিতে নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে তার নতুন কর্মস্থল দিয়ে চলাচলরত গাড়ি চালক ও সড়কের পাশে বসা হকাররা।

ঘুরে ফিরে সিএমপিতে টিআই শামসুদ্দিনের ঘাপটি মেরে বসে থাকাকে খুব স্বাভাবিক নিচ্ছেন না সচেতন মহল।

তারা বলছেন,সবার বদলি হলেও বহাল তবিয়তে থেকে যায় টিআই শামসুদ্দিন।তার চাঁদাবাজির কারিশমার কাছে হার মানতে বাধ্য হয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও।

এ যেন এক রহস্যের ভাণ্ডার।সাধারণ মানুষের প্রশ্ন,তাহলে কি এর পেছনে অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে আছে!

তারা বলছেন,পরিবহন সেক্টরে যেন ট্রাফিক পুলিশের নৈরাজ্য না থাকে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে।টিআই শামসুদ্দিনকে সিএমপি থেকে বদলি করা এখন সময়ের দাবি।

এর আগে অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়,হিউম্যান হলার,গ্রাম সিএনজি,মাহেন্দ্র,মিনি বাস,রাইডারসহ রুটপারমিটবিহীন বিভিন্ন অবৈধ

গাড়ি চলাচল করে অনায়াসে।এসব গাড়ির মূল স্টেশন নতুন ব্রিজের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি।মাসোয়ারার বিনিময়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক

দক্ষিণ বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) সামশুদ্দিন এ অবৈধ গাড়িগুলোর

বৈধতা দিয়েছেন।আর এর মাধ্যমে ঘুষ হিসেবে মাসে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা যায় টিআই সামশুদ্দিনের পকেটে।এছাড়া নতুন ব্রিজ এলাকার শাখা রোডগুলোকেও

টিআই সামশুদ্দিন বানিয়েছেন অবৈধ অটোরিকশার স্বর্গরাজ্য।কিছু গাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শহরে ঢুকে,আবার কিছু গাড়ি নতুন ব্রিজ এলাকা

থেকে ছেড়ে যায় শহরের উদ্দেশ্যে।আর এসব কিছুরই নিয়ন্ত্রক টিআই সামশুদ্দিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিদিন কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, মগনামা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী এবং পটিয়া থেকে আনুমানিক ১০০টি

গ্রাম নিবন্ধিত যানসহ মোট ৪৫০ টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা মহসড়ক দিয়ে শাহ আমানত সেতু পার হয়ে নগরে প্রবেশ করে। এরমধ্যে অনিবন্ধিত ৩৫০টি

সিএনজি চালিত অটোরিকশা লাইন খরচ বাবদ দৈনিক ৩০ ও মাসিক ২৫০০ টাকা নেন। বাকী গ্রাম নাম্বারধারী ১০০ অটোরিকশা (সিএনজি) থেকে একই হারে

দৈনিক ও মাসোহারা নেয় টিআই সামশুদ্দিন। এসব টাকা তোলার জন্য টেন্ডল হিসেবে জাহাঙ্গীর মিস্ত্রিসহ বেশ কয়েকজনকে ব্যবহার করেন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি অটোরিকশা থেকে দৈনিক ৩০ টাকা করে মাসে প্রায় ৪ লক্ষ ৫ হাজার ও ২৫০০ টাকা মাসোহারায় প্রায় ১১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা

চাঁদা আদায় করা হয়। এ হিসেবে মাসে মোট চাঁদা আদায় করা হয় প্রায় ১৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।সে হিসেবে বছরে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৩

লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়াও টিআই সামশুদ্দিনের নামে চলা আরো ১০০টি গ্রাম নাম্বারধারী অটোরিকশা থেকে নেয়া হয় যান প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা।

যার পরিমাণ মাসে প্রায় ৯০ হাজার আর বছরে ১০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এসব যানবাহনগুলো নগরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে টিআই ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা বছরে চাঁদা আদায় করছেন প্রায় ১ কোটি ৯৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।

অনুসন্ধান বলছে,পুলিশের প্রবিধানে একই স্থানে দায়িত্ব সীমা ২ বছর হলেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) সামশুদ্দিনের ক্ষেত্রে যেন আইনের ঠিক উল্টো। একই জোনের অন্যান্য কর্মকর্তারা বদলি হলেও দীর্ঘ ৫ বছরের অধিক সময় একই জায়গায় (বাকলিয়া থানা) বহাল তবিয়তেআছেন তিনি। ২০১৬ সালের শুরু থেকে অদ্যবধি বাকলিয়ায় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) হিসেবে সামশুদ্দিন বহাল তবিয়তে আছেন। অথচ এ সময় ওই জোনের (ট্রাফিক দক্ষিণ) বাকী থানাগুলোর দায়িত্বরত টিআইদের বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। উর্ধ্বতন অফিসারদেরও (ডিসি,এডিসি,এসি) কয়েক ধাপে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য খুঁটির জোড়ে ৫ বছরের অধিক সময় একই এলাকায় টিআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সামশুদ্দিন। অথচ পুলিশ প্রবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, কোন পুলিশ সদস্য দুই বছরের বেশি সময় এক স্থানে থাকতে পারবেন না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে কিছু সময় বাড়াতে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাস্তুহারা সড়কের মুখে খালি জায়গায় শতাধিক সিএনজি চালিত অটোরিকশা পার্কিং অবস্থায় রয়েছে। একটু ভেতরে খালি অন্য

আরেকটি জায়গায় আরো প্রায় দেড়’শ মতো সিএনজির পার্কিং।

সিএনজি চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় জাহাঙ্গীর মিস্ত্রি নামের এক চাঁদাবাজ টিআই সামশুদ্দিনের যোগসাজশে প্রতিটি

অনিবন্ধিত সিএনজি থেকে মাসোহারা ও দৈনিক হিসেবে চাঁদা নেন। টাকা তোলেন জাহাঙ্গীরের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত দুই আলমগীর, অলী ও জামাই

হিসেবেপরিচিত এক ব্যক্তিসহ ৪ জন। এছাড়া, নিবন্ধিত প্রায় এক’শ সিএনজি চলে সরাসরি টিআই সামশুদ্দিনকে চাঁদা দিয়ে। এসব টাকা তুলেন টিআয়ের

টেন্ডল হারুন নামের এক যুবক।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, টেন্ডল খ্যাত হারুন টিআই সামশুদ্দিনের অবৈধ টাকা তোলার মূল কারিগর। তাকে দিয়ে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা তুলেন বাকলিয়ার এই টিআই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
ব্রেকিং নিউজ