প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে বরগুনা জেলার পাঁচটি উপজেলার ২৯টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ২১ জুন। বরগুনা জেলার ৫ নং আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম মজিবুল হক কিসলু।জেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এই প্রার্থী শুধু একজন আইনজীবী নয়, তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রতিনিধিও। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন তিনি। কিন্তু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট যুদ্ধে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের কাছে হেরে যান তিনি।তবে ভোট জালিয়াতির কথা উল্লেখ করে পরাজয় মানতে নারাজ ছিলেন সাংবাদিক ও এডভোকেট কিসলু।ভোটে হেরে প্রশাসনের প্রতিও ক্ষোভ জমে তার।
এবার আরেকটি ঘটনার দিকে নজর দেয়া যাক।
প্রথম ধাপের ওই ইউপি নির্বাচনে নলটোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর চেয়ারম্যানপদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয় নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন তিনি।ভোটের মাঠে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে তার ভাই মিলন হাওলাদার স্থানীয় প্রশাসনসহ বরগুনার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিকের সাথে দেখা করে ভাইয়ের সংশয়ের কথা জানিয়ে আবেদন জানান।এসপি জাহাঙ্গীর মল্লিকও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।পাশাপাশি ভোটের মাঠে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে প্রশাসনকে অবহিত করারও পরামর্শ দেন তিনি।জেলা পুলিশের সবোর্চ্চ পদে থাকা এই কর্মকর্তার সাবলীল ভাষা আর আন্তরিকতায় মিলন হাওলাদারের অন্তরে একজন আইকন হিসেবে স্থান পায় এসপি জাহাঙ্গীর ।জুন মাসের ২১ তারিখের সেই ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলায় শতভাগ সফলতা অর্জন করে বরগুনা পুলিশ প্রশাসন।ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবীর ভোটযুদ্ধে হেরে যান।
ছবি থেকে সংবাদের শিরোনাম:
চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ক্রাইম কনফারেন্স উপলক্ষ্যে ঢাকায় আসেন বরগুনার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক।কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে কেনাকাটা করতে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে যান তিনি।সেখানে একপর্যায়ে দেখা হয় নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী হুমায়ুন কবীরের ভাই মিলন হাওলাদারের সাথে।নিজ জেলার পুলিশ সুপারকে হঠাৎ সামনে পেয়ে খুশির ঝড় ওঠে মিলনের মনে।অন্তরে আইকন হিসেবে স্থান দেয়া এসপি জাহাঙ্গীরকে নিজের সামর্থ্য দিয়ে আপ্যায়ন করার চেষ্টা করেন তিনি।পুলিশ জনগণের বন্ধু-এই নীতিতে বিশ্বাসী এসপি জাহাঙ্গীর সরল বিশ্বাসে নিজ কর্মস্থল জেলার সাধারণ মানুষ হিসেবে বিবেচনায় রাখা মিলনের সাথে কিছুটা সময় বসে কথা বলেন।কথার ফাঁকে হঠাৎ এসপির পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ‘সেলফি’ তোলেন মিলন।এরপর সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি।ডিজিটাল যুগে জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন অভিভাবকের সাথে ছবি তুলে সেটি ফেসবুকে দিয়েছেন মিলন-এটি খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।
এটি এখানেই শেষ হতে পারতো।কিন্তু সামান্য এই ছবিকে একটি ঘটনায় পরিণত করে জাতীয় পর্যায়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে একটি কুচক্রী মহল। সেই কাতারে নাম লিখিয়েছে প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিক,সাথে আছে কিছু ভুঁইফোড় অনলাইন গণমাধ্যমও।
অভিযোগ উঠেছে, সরলমনা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিকের সাথে মিলনের সেই ‘সেলফি’কে পুঁজি করে পুলিশ বাহিনীকে প্রশ্নবৃদ্ধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে একটি সংঘবদ্ধ কুচক্রী মহল।রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পেরে নানাভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে তারা।পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিককে বেকায়দায় ফেলতে মিলনকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে ফেসবুকের সেই ছবিকে পাঠানো হয় বিভিন্ন দফতরে।তারপর রাজনৈতিক প্রভাব আর সাংবাদিকতা পেশাকে পুঁজি করে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়।
ইউপি নির্বাচনে প্রশাসনকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারা সাংবাদিক ও এডভোকেট এম মজিবুল হক কিসলু পরাজয়ের বেদনায় সুখের ছোঁয়া লাগাতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমকে।ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ব্যক্তি আক্রোশের বহি:প্রকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন পত্রিকায় পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর তিলকে তাল বানানো সংবাদের সত্যতা যাচাই:
আইনজীবী পেশায় থাকা কিসলু যে পত্রিকায় কাজ করেন সেটিতে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক ও মিলনের সেই ছবিটি দিয়ে
‘এসপির সঙ্গে সন্ত্রাসীর বিরল বন্ধুত্ব’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে পত্রিকার ওই সংবাদে বলা হয়, ‘ছবির কথা পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে জেনে যাওয়ায় বরগুনার বৈশাখী টিভির প্রতিনিধি মিজানুর রহমান, বরিশালের দৈনিক দিন প্রতিদিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মো. জাফর খান এবং বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুজ্জামান মাহফুজকে থানায় ডেকে এসপি জাহাঙ্গীর মল্লিক ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।’
পত্রিকার এই সংবাদের সূত্র ধরে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুজ্জামান মাহফুজ বলেন,জনবান্ধব এসপি জাহাঙ্গীর মল্লিক তার সাথে কোন খারাপ আচরণ কখনো করেন নি।যুগান্তর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন,পত্রিকার রিপোর্টার তার নাম দিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে।কিন্তু তার কোন বক্তব্য নেয় নি প্রতিবেদক।
পত্রিকার সংবাদের সূত্র ধরে আরেকজন ভুক্তভোগী বরগুনার বৈশাখী টিভির প্রতিনিধি মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন কেটে দেন।
এবার আরেকজন কথিত ভুক্তভোগী দৈনিক দিন প্রতিদিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মো. জাফর খানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনিও।তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে,জাফর খান সাংবাদিকতার আড়ালে মূলত থানায় বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য ও পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে।
মিলন কি আসলেই সন্ত্রাসী:
যুগান্তর পত্রিকার ওই সংবাদে মিলনকে চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।ধর্ষণ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, প্রতারণাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামিও বলা হয় তাকে।এবার এ কথার সত্যতা যাচাই করতে চায় অপরাধ বিচিত্রা। পুলিশ রেকর্ড বলছে,গত ২০১৮ সালের মে মাসের ১৩ তারিখ বরগুনা থানায় রিয়াজ সরদার নামে এক ব্যক্তি আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আইন-২০০২ এর ৪/৫ ধারায় মিলনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে।মামলা নম্বর-২১।এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মিলন নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।এরপর চলতি বছরের জুন মাসের ২০ তারিখ মো: নাইম নামে আরেক ব্যক্তি মিলনকে আসামী করে ১৪৩,৩৪১,৩২৩,৩২৫,৩০৭,৩৭৯,৪২৭ ও ৫০৬ পেনাল কোড ধারায় মামলা দায়ের করেন।এটি ছিল নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মারামারি মামলা।এ মামলাতেও মিলনের যোগসূত্রতা না পাওয়ায় আদালত তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা থেকে অব্যহতি দেন।এর বাহিরে পুলিশের রেকর্ডে মিলনের বিরুদ্ধে আর কোন মামলা কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তথ্য পাওয়া যায় নি।
তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়নের কারণে পারিবারিক মামলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে।পরে আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে সমাধান হয় সেটিও।তবে কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় নি। নামে অপপ্রচার চালানো শুরু করে।পুলিশ সুপারের বক্তব্য:
একটি ছবিকে কেন্দ্র করে জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাকে প্রশ্নবৃদ্ধ করা হয়েছে।বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক,জানতে চাই তার কাছে।
অপরাধ বিচিত্রাকে তিনি বলেন, জনগণের সেবক হিসেবে প্রতিটি নাগরিকের জন্য তার দরজা সবসময় খোলা রয়েছে।সেবা গ্রহীতা কোন নাগরিকের মণক্ষুন্ন হোক সেটি তিনি চান না।শুধু এসপির চেয়ারে বসে থেকে নয়, মানুষের খুব কাছাকাছি গিয়ে সমাজের নানা অসঙ্গতি দূর করার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার চেষ্টা করেন তিনি।প্রতিটি পুলিশ সদস্য মানুষের মনের মধ্যে জায়গা করে নিতে পারলে সমাজের অপরাধ প্রবণতা যেমন কমবে,তেমনি পুলিশের প্রতি বাড়বে শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা।শুধু এ চিন্তাবোধ থেকেই মিলনসহ সেবা নিতে আসা প্রতিটি নাগরিকের সাথে তিনি সুসম্পর্ক বজায় রেখেছ্নে।
তিনি বলেন,পুরো বরগুনা জেলায় সাধারণ মানুষের সংখ্যা কম নয়।প্রতিদিনই অসংখ্য নাগরিক নানা সমস্যা নিয়ে হাজির হন তার কাছে।সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে কার কয়টি মামলা রয়েছে সেটিতো তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারাটা অসম্ভব।তবে সংশ্লিষ্ট থানাসহ প্রতিটি অফিসারকে নির্দেশ দেয়া আছে কোন অপরাধীই যেন আইনের চোখ ফাঁকি দিতে না পারে।সেজন্য নিয়মিত অভিযানও চলমান রয়েছে।
মিলনের বিষয়ে তিনি বলেন,সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে মিলনও একজন।তার ভাই প্রার্থী থাকার সুবাধে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন।এরপর ঢাকায় দেখা হলে তিনি সম্মানের সাথে কুশল বিনিময় করেন।মানবিক দিক বিবেচনায় একজন মানুষ হিসেবে তার সাথে বসে খাওয়া-দাওয়া করেন তিনি।তবে মিলন হঠাৎ কয়েকটি ছবি তুলে সেগুলো সরল বিশ্বাসে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।পরবর্তীতে এই ছবি একটি কুচক্রীমহল মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন দফতরে পাঠায়।ছবির বিষয়ে হঠাৎ একদিন সাংবাদিক এম মজিবুল হক কিসলু ফোন করে জানতে চান।এরপর পত্রিকায় নিউজও আসে।
মিলন আসলে সন্ত্রাসী কিনা জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার জানান,মিলনকে একজন সাধারণ সেবা গ্রহীতা ও প্রার্থীর ভাই হিসেবেই চিনতেন তিনি।পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকায় নির্বাচনে তার ভাই পরাজিতও হয়েছিল।পরে ছবির বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে মিলনের পুলিশ রেকর্ড ঘেটে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি।তবে পারিবারিক মামলা এবং মারামারির মামলা পাওয়া গেলেও সেগুলো থেকে খালাস পেয়েছে মিলন।
তাহলে মিলনকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ কেন প্রচার করা হল,এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি জাহাঙ্গীর বলেন,জেলার অপরাধ
দমনসহ মাদক নিয়ন্ত্রণে তার সফলতার পাল্লা অনেক ভারী।সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রেও পুলিশ প্রশাসন শক্ত অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে।জনগণের সেবক পুলিশের এই ধরণের দায়িত্ব পালনের কারণে অনেকেই তার প্রতি মণক্ষুন্ন তবে সব ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে পুলিশের পবিত্র পোশাকের মর্যাদা রক্ষার যে শপথ নিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের মতামত:
মিলন হাওলাদারের বিরুদ্ধে পুলিশ রেকর্ডে কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অস্তিত্ব নেই।কিন্তু দেশের প্রথম সারির পত্রিকায় তাকে ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।পাশাপাশি ক্ষুন্ন করা হয়েছে জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি।বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন আইন বিশেষজ্ঞ ও বরগুনা জেলার সাংবাদিক নেতারা,এবার অপরাধ বিচিত্রা জানতে চায় তাদের মতামত।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট মোস্তফা কাদের।তিনি বরগুনা জেলায় এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ ও জনকণ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
তিনি বলেন,মিলনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা কোন প্রতারণা কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তথ্য পায় নি।তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদ প্রচার করা সমীচিন হয় নি।এটি একটি অপপ্রচার।মিথ্যা তথ্য দিয়ে কারো সম্মান নষ্ট করার অধিকার কোন পত্রিকার নেই।তিনি চাইলে ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে মানহানি মামলার পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা সুযোগ রয়েছে।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক হাসানুর রহমান ঝন্টু।সাংবাদিকতা পেশায় রয়েছে তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা।তিনি চ্যানেল আই ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের বরগুনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
অপরাধ বিচিত্রার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন,সাংবাদিকতা পেশাকে এখন অনেকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে আয়ের একটি রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করছে।নীতিমালা না থাকায় ভিন্ন পেশার
মানুষরা কপি-পেষ্ট নিউজের মাধ্যমে দখল করে রেখেছে মহান এ পেশার অপার সম্ভাবনাকে।অনেক সাংবাদিক আছে যারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিউজের ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকে।স্বার্থে আঘাত লাগলে তারা পত্রিকাকে অপপ্রচারের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
তিনি বলেন,সাধারণ মানুষ যারা আছে তারা সবসময় চায় একজন অফিসারের সাথে ছবি তুলতে।এটি দোষের কিছু নয়।পুলিশ জনগণের সেবক হিসেবে সবার সাথেই মিশতে হয়।সেখানে কে অপরাধী,আর কে ভালো সেটি বোঝা কষ্টসাধ্য।ছবির তোলার কারণে কোন ব্যক্তির অপরাধের দায়ভার কোনভাবেই কোন পুলিশ অফিসারের উপর বর্তায় না।কে কোন উদ্দেশ্যে ছবি তুলেছে সেটি সম্পূর্ণ তার নিজস্ব এখতিয়ার।ছবি দেখিয়ে কেউ অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়।
যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন,যেকোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হতেই পারে।তাই বলে সে সন্ত্রাসী নয়।অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগে কোনভাবেই কাউকে অপরাধী বলা যাবে না।পুলিশ সুপার ও মিলনকে নিয়ে যে সংবাদটি প্রকাশ হয়েছে সেটিতে যথেষ্ট পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।
বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বরগুনা পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে।ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষূন্ন করার অধিকার কারো নেই।অনেক সাংবাদিক আছে যারা ভিন্ন পেশায় থেকেও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের হাতিয়ার হিসেবে পত্রিকাকে ব্যবহার করে।এরা আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক পদ-পদবীতেও থাকে।মূলত রাজনৈতিক পদে কিংবা বিভিন্ন পেশায় থাকা মানুষরা সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকলে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ বলতে কিছুই থাকবে না।তারাতো নিজেদের আখের ঘোচাতে ব্যস্ত থাকবে।এদেরকে সবাই হলুদ সাংবাদিক হিসেবেই জানে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য:
বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিকের সাথে মিলনের ছবি জড়িয়ে সংবাদ প্রচারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন,যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া কোন সংবাদ গ্রহণেযোগ্য নয়।কেউ মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতামত:
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অপরাধীকে নয়,অপরাধকে ঘৃণা কর-এটি যদি হয় বাস্তবতা।তবে ছবি নিয়ে কেন এত রং তামাশা।সাজা প্রাপ্ত আসামী না হওয়ার পরও একজন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেশজুড়ে প্রচারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে প্রশ্নবৃদ্ধ করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।যেকারণে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভুল ধারণা থেকেই যাবে।তাই সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলোকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার পরামর্শ দেন তারা।
কিসলুর সনদ জালিয়াতি:
অনুসন্ধান বলছে,বরগুনা জেলার ৫ নং আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম মজিবুল হক কিসলুকে সবাই ভুয়া কিসলু হিসেবেই জানে।মূলত চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকে পুলিশের প্রতি তার আক্রোশ জমে।ভোটের সময় পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকায় কিসলুর রোষানলে পড়ে পুলিশ।যে কারণে পুলিশ প্রশাসনকে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্রের ছঁক আঁকেন তিনি।আর এ কাজে ব্যবহার করেন সাংবাদিকতা পেশাকে।তিনি যে পত্রিকায় কাজ করেন সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রশাসনকে প্রশ্নবৃদ্ধের জায়গায় দাঁড় করানোর অপপ্রয়াসে চালানো শুরু করেন অপপ্রচার। এম মজিবুল হক কিসলুকে কেন ভুয়া কিসলু বলা হয়?অপরাধ বিচিত্রা অনুসন্ধানের মাধ্যমে সেই তথ্য খুঁজে বের করে। ভুয়া সনদের মাধ্যমে বরগুনা আদালতে আইনজীবি পরিচয়ে কাজ করেন কিসলু।কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তার এই প্রতারণা ধরা পড়ে আদালতে।পরবর্তীতে তাকে ভুয়া হিসেবে আখ্যায়িত করে আইনজীবি সনদ নিষিদ্ধ করা হয় এবং কখনো বারের সনদ না পাওয়ার বিষয়ে আজীবনের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর ‘ল’ পাস করে আবারো বার কাউন্সিলে পরীক্ষা দেয় কিসলু।কিন্তু গোপন রাখে তার উপর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞার আদেশ।কিন্তু সেটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আবারো কিসলুকে নিষিদ্ধ করা হয়।সনদ জালিয়াতি এবং তথ্য গোপন করায় কিসলু দুইবার ‘বার কাউন্সিলের’ সনদ হারায়।কিন্তু সংসারের আর্থিক অনটন আর মানবিকতার অজুহাত দেখিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যায় কিসলু।মহামান্য হাইকোর্ট সদয় বিবেচনায় কিসলুকে আইনজীবি হিসেবে কাজ করার অনুমতি প্রদান করেন।
আতংকের নাম কিসলু :
অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে রাজনৈতিক পদ-পদবীধারী,আইনজীবী ও সাংবাদিকতা পেশার আড়ালে কিসলুর অপরাধ জগতের নানা তথ্য। কিসলুর এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন জানান, এলাকায় নীরব চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে কিসলু।জামায়াত-বিএনপির চিহ্নিত নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে তার চরাফেরা।তার রয়েছে বিশাল একটি কিশোরগ্যাং।এ গ্যাংয়ের মাধ্যমে পুরো ইউনিয়নবাসীকে আতংকে রাখেন তিনি।আইনজীবি পরিচয়ে মামলা-মোকদ্দমায় ফাঁসানো আর সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা ছাড়াও আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক পরিচয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়ায় কিসলু।জোরপূর্বক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সভাপতির পদ দখল করে স্বেচ্ছাচারিতাও করছেন তিনি।হুমকি-ধমকি, নিউজ আর মামলার ভয়ে তটস্থ থাকে এ ইউনিয়নের অসহায় মানুষগুলো।ইউনিয়নের শ্যেষ্ঠ রাজাকার রফিক গাজীর ছেলে নজরুল গাজী,বিএনপি নেতা জালাল, তুহিন গাজী,রনি,মজনু শরীফসহ এলাকার জামায়াত বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন তিনি।কদমতলায় নিরালা চাইল্ড কিন্ডারগার্টেন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের দিয়ে তুহিন গাজীর সহায়তায় কিসলু কিশোরগ্যাং গড়ে তুলেছে।কিসলুর ছেলে রাকিবুলও অপরাধ জগতের সাথে জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে।এমনকি মাদক ব্যবসার সাথে যোগসূত্রতা রয়েছে রাকিবুলের।মূলত সরকারদলীয় একজন মন্ত্রীকে ব্যবহার করে নিজেকে প্রভাবশালী বানিয়েছেন কিসলু।মন্ত্রীর অজান্তে কিসলু অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।
কিসলুর হাত থেকে রক্ষা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক:
চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন জানান, কিসলুর আপন বড় ভাই আব্দুল বারেক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।তিনি একজন প্যারালাইসিস রোগী।মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে একটি বাড়ি বরাদ্দ পান তিনি।অথচ সেই ভাইকেও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন তিনি।পরে তাকে অন্য একটি জায়গায় ঘর তুলে দেয় সরকার।
এম মজিবুল হক কিসলুর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নির্বাচনের সময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ সহযোগিতা না করায় তিনি জামায়াত বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচনী তাণ্ডব চালায় বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।
কিসলুর বক্তব্য ও সংবাদ প্রচার না করার অনুরোধ:
অপরাধ বিচিত্রা অভিযোগের বিষয়ে জানতে এম মজিবুল হক কিসলুর সাথে যোগাযোগ করে।তিনি মুঠোফোনে বলেন,তার সনদ জালিয়াতির বিষয়টি সত্য নয়।কিন্তু এরপরক্ষণেই সংবাদ প্রচার না করার তদবির নিয়ে অপরাধ বিচিত্রা অফিসে ফোন দেয় আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার প্রতিনিধি পরিচয়ে সাগর নামে এক ব্যক্তি।তিনি কিসলুর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতামত:
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, অন্যায়-অপরাধ ঢাকতে ও নিজের স্বার্থ ঘোচাতে অনেকেই বেছে নিয়েছে সাংবাদিকতা পেশাকে।কিছু অপসাংবাদিকের কারণে দিনদিন এ পেশার সম্মান ক্ষুন্ন হতে বসেছে।এ পেশাকে পুঁজি করে অনেকেই বনে গেছে রাঘব বোয়াল।তাদের স্বার্থে আঘাত হলেই বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে চালায় অপপ্রচার।যা দেশ ও সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না।ভিন্ন পেশার মানুষ সাংবাদিকতা পেশায় ঢুকে পরায় এ পেশার প্রতি মানুষের আস্থাও কমেছে অনেকাংশে। অনেক সাংবাদিক আছে যারা রাজনীতিবিদদের খোলস পরে আছে।গিরগিটির মতো সময়ে সময়ে তারা রং পাল্টায়।মানুষের কল্যাণে ও সমাজ পরিবর্তনে এ ধরণের নামধারী সাংবাদিক কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।
তারা মনে করেন,বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের মাধ্যমে অপরাধীরা যেমন সুযোগ লুপে নেয়,তেমনি আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্যও হুমকি স্বরুপ হয়ে দাঁড়ায় কথিত সাংবাদিকদের এসব প্রোপাগান্ডামূলক সংবাদ।